খতিয়ান এর সংজ্ঞা

খতিয়ান হলো হিসাব লিপিবদ্ধ করার সর্বশেষ আশ্রয়স্থল। খতিয়ান শব্দের ইংরেজি "Ledger" এর অর্থ হলো তাক। তাকে আমরা যেমন আমাদের নৈমিত্তিক জিনিষপত্র সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখি, তেমনি খতিয়ানে ও আমরা আমাদের লেনদেন গুলোকে সুশৃঙ্খল ভাবে সাজিয়ে রাখবো। জাবেদা থেকে প্রত্যেকটি হিসাবের শিরোনাম অনুশারে আলাদা আলাদা ভাবে হিসাব লেখাই হলো ঐ হিসাব শিরোনামের জন্য খতিয়ান। একটি জাবেদায় দুটি বা ততোধিক হিসাব শিরোনাম থাকে। ঐ প্রত্যেকটি হিসাব শিরোনামের জন্য একেকটি আলাদা আলাদা খতিয়ান প্রস্তুত করতে হবে। তাহলে এভাবে বলা যায়, জাবেদা থেকে হিসাবের শিরোনাম অনুসারে আলাদা আলাদা হিসাব প্রস্তুত করার নামই হলো খতিয়ান। A ledger is the master set of accounts that summarize all transactions occurring within an entity.

কয়েকটি জাবেদা ও সমাধান -২

নগদে ক্রয় সংক্রান্ত জাবেদাঃ
১। নগদ টাকার বিনিময়ে পন্য ক্রয় ২০,০০০/-
সমাধানঃ                       ক্রয় হিসাব                       ডেবিট          ২০,০০০/-
                                 নগদান হিসাব                    ক্রেডিট                         ২০,০০০/-
এখানে ক্রয় একটি ব্যয় বাচক হিসাব এবং এই লেনদেনটির ফলে ক্রয় বা ব্যয়ের পরিমান বৃদ্ধি পেয়েছে তাই ক্রয় হিসাব ডেবিট।আবার নগদ টাকা সম্পত্তি বাচক হিসাব এবং এখানে নগদ টাকার পরিমান হ্রাস পেয়েছে বা কমে গেছে তাই নগদান হিসাব ক্রেডিট হয়েছে।
২। নগদ টাকার বিনেময়ে আসবাবপত্র ক্রয় ২০,০০০/-
সমাধানঃ                    আসবাবপত্র হিসাব             ডেবিট              ২০,০০০/-
                              নগদান হিসাব                  ক্রেডিট                             ২০,০০০/-
এখানে ক্রয় কথাটি থাকলে ও ক্রয় হিসাব ডেবিট হলো না কারন আসবাবপত্র একটি সম্পদ আর সম্পদ ক্রয় করা হলে তার জন্য উক্ত সম্পদ হিসাবকে ডেবিট করতে হবে। তাই এখানে ক্রয় হিসাব ডেবিট না হয়ে আসবাবপত্র হিসাব ডেবিট করা হলো। অপরদিকে নগদ টাকা সম্পত্তি বাচক হিসাব এবং এখানে নগদ টাকার পরিমান হ্রাস পেয়েছে বা কমে গেছে তাই নগদান হিসাব ক্রেডিট হয়েছে।
 মনে রাখতে হবে শুধু মাত্র পন্যদ্রব্য ক্রয় করার কথা থাকলে সেখানে ক্রয় হিসাব ডেবিট করতে হবে অন্যথায় নয়। 
৩। পন্য ক্রয় ৫,০০০/-
সমাধানঃ                 ক্রয় হিসাব                  ডেবিট                 ৫,০০০/-
                           নগদান হিসাব               ক্রেডিট                              ৫,০০০/-
এখানে পন্য ক্রয়ের সাথে নগদ বা বাকিতে ক্রয় কিছুই উল্লেখ নাই সেক্ষেত্রে আমরা নগদে ক্রয় ধরে নিব এবং জাবেদা ১ নং জাবেদার মতই হবে। 
  

কয়েকটি জাবেদা ও সমাধান -১

মূলধন সংক্রান্ত জাবেদাঃ
১। জনাব কলিম ১০,০০০ টাকা নিয়ে ব্যবসায় আরম্ভ করলেন।
সমাধানঃ                 নগদান হিসাব               ডেবিট             ১০,০০০/-
                           মূলধন হিসাব                ক্রেডিট                                ১০,০০০/-
এখানে লেনদেনটিতে দুটি পক্ষ আছে। শুরূতে আমরা পক্ষ দুটিকে খুজে বের করব। যেহেতু নগদ টাকা নিয়ে ব্যবসায় শুরু করেছেন তাই নগদান হিসাব একটি পক্ষ অপরদিকে ব্যবসায় শুরুতে যা কিছু ব্যবসায় দেয়া হয় তা সব মূলধন তাই মূলধন আরেকটি পক্ষ। এখন নগদ টাকা সম্পদ এবং লেনদেনটির ফলে ব্যবসায়ের নগদ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে তাই নগদান হিসাব ডেবিট হয়েছে। আবার মূলধন ব্যবসায়ের দায় এবং এখানে ব্যবসায়ের মূলধন বৃদ্ধি পেয়েছে তাই মূলধন হিসাব ক্রেডিট হয়েছে। 

২। জনাব কলিম ১০,০০০ টাকা, ৫,০০০ টাকা মূল্যের আসবাবপত্র এবং ৫,০০০ টাকা ব্যাংকে জমা নিয়ে ব্যবসায় আরম্ভ করলেন। 
সমাধানঃ                 নগদান হিসাব               ডেবিট             ১০,০০০/-
                           আসবাবপত্র হিসাব          ডেবিট               ৫,০০০/-
                           ব্যাংক হিসাব                ডেবিট               ৫,০০০/-
                           মূলধন হিসাব                ক্রেডিট                                ২০,০০০/-
এখানে  নগদ টাকা, আসবাবপত্র, ব্যাংক জমা নিয়ে ব্যবসায় শুরু করেছেন তাই নগদান হিসাব, আসবাবপত্র হিসাব, ব্যাংক হিসাব এগুলো একটি পক্ষ অপরদিকে ব্যবসায় শুরুতে যা কিছু ব্যবসায় দেয়া হয় তা সব মূলধন তাই মূলধন আরেকটি পক্ষ। এখন নগদ টাকা, আসবাবপত্র, ব্যাংক জমা সম্পদ এবং লেনদেনটির ফলে ব্যবসায়ের উক্ত সম্পদ গুলো বৃদ্ধি পেয়েছে তাই নগদান হিসাব, আসবাবপত্র হিসাব এবং ব্যাংক হিসাব সবগুলো ডেবিট হয়েছে। আবার মূলধন ব্যবসায়ের দায় এবং এখানে ব্যবসায়ের মূলধন বৃদ্ধি পেয়েছে তাই মূলধন হিসাব ক্রেডিট হয়েছে। 
আমরা চাইলে এগুলোর জন্য আলাদা আলাদা ভাবেও জাবেদা করতে পারতাম। সেক্ষেত্রে জাবেদা গুলো এ রকম হতোঃ

সমাধানঃ                 নগদান হিসাব               ডেবিট             ১০,০০০/-
                           মূলধন হিসাব                ক্রেডিট                                ১০,০০০/-
                          
                           আসবাবপত্র হিসাব               ডেবিট             ৫,০০০/-
                           মূলধন হিসাব                ক্রেডিট                                ৫,০০০/-
                          
                           ব্যাংক হিসাব               ডেবিট            ৫,০০০/-
                           মূলধন হিসাব                ক্রেডিট                                ৫,০০০/-






জাবেদা শেখার পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন

জাবেদা সহজ ভাবে শেখার জন্য এই পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনটি যথেষ্ট কাজে দেবে। তাই এই প্রেজেন্টেশনটি ডাউনলোড করে দেখতে পারেন। আশা করি উপকার পাবেন। 

Power Point Presentation 

ডেবিট ক্রেডিট নির্নয়ের সূত্র

হিসাব বিজ্ঞানের মাধ্যমে হিসাব রাখার জন্য সর্বপ্রথম হিসাবের ডেবিট ও ক্রেডিট নির্নয় করা জানতে হবে। প্রথমেই হিসাবের ডেবিট ও ক্রেডিট নির্নয় করে তা থেকে জাবেদা প্রস্তুত করতে হবে। ডেবিট ক্রেডিট নির্নয় করা ভালোভাবে বুঝতে হলে তা নির্নযের জন্য নির্দিশ্ট সূত্র অবলম্বন করতে হবে। এ সূত্রের মাধ্যমে বুঝে বুঝে ডেবিট ক্রেডিট নির্নয় করতে পারলে তা সম্পূর্ন সঠিক হবে। তাই এ সূত্রটি আমাদের সবাইকে সুন্দর ভাবে আয়ত্ত করতে হবে। সূত্রটি হবে এভাবে  ..........



ব্যাখ্যাঃ
        আমরা জানি যে, হিসাব চার প্রকার। এই চার প্রকার হিসাব থেকেই আমাদের ডেবিট ও ক্রেডিট নির্নয় করতে হবে।সম্পত্তিবাচক হিসাবের ক্ষেত্রে সম্পত্তি বৃদ্ধি পেলে ডেবিট এবং সম্পত্তির পরিমান কমে গেলে ক্রেডিট হবে, দায়বাচক হিসাবের ক্ষেত্রে দায়ের পরিমান বৃদ্ধি পেলে তা ক্রেডিট হবে এবং দায়ের পরিমান কমে গেলে তা ডেবিট হবে। একটু কেয়াল করলে দেখা যাবে যে এখানে সম্পত্তিবাচক হিসাব এবং ব্যয়বাচক হিসাবের সূত্র একই । অর্থাৎ সম্পত্তিবাচক হিসাবের ক্ষেত্রে যেভাবে ডেবিট ক্রেডিট নির্নয় করা হয়েছে ব্যয়বাচক হিসাবের ক্ষেত্রেও তেমনিভাবে করা হয়েছে। আবার দায়বাচক হিসাব এবং আয়বাচক হিসাব ও অনুরূপভাবে করা হয়েছে। 
তাই উপরের সূত্রানুযায়ী সহজ ও সাবলীল ভাবে হিসাবের ডেবিট ক্রেডিট নির্নয় করে জাবেদা করলে তাতে ভূল হবার সম্ভাবনা অনেক কমে যাবে।  

জাবেদার ছক


জাবেদা প্রস্তুত করার জন্য লেনদন গুলোকে বিশ্লেষণ করার পর তা নির্দিশ্ট ছকের মাধ্যমে উপস্থাপন করতে হয়। তাই জাবেদা প্রস্তুত করার জন্য জাবেদার ছক সম্পর্কে ধারনা থাকতে হবে। সেজন্য নিম্নে জাবেদার ছক তুলে ধরা হলোঃ


এখা্নে তারিখের  ঘরে লেনদেন সংঘটনের তারিখ, বিবরণের ঘরে লেনদেনের বিবরণ, খঃ পৃঃ এর ঘরে সাধারণত কিছু লেখা হয় না, ডেবিট ঘরে ডেবিট টাকার পরিমান এবং ক্রেডিট ঘরে ক্রেডিট টাকার পরিমান লেখা হয়।
এটিই জাবেদার ছক। এভাবে প্রত্যেকটি লেনদেন তারিখের ক্রমানুশারে সাজিয়ে ছকের মাধ্যমে দেখাতে হবে।


হিসাবের শ্রেণিবিভাগ

হিসাবকে সাধারণত দুটি দিক থেকে ভাগ করে দেখানো হয়েছে :
ক) সনাতন পদ্ধতি ও
খ) আধুনিক পদ্ধতি
বর্তমানে সনাতন পদ্ধতির ব্যবহার নেই বললেই চলে। তাই এখানে শুধু আধুনিক পদ্ধতি সম্পর্কে তুলে ধরা হলো।
আধুনিক পদ্ধতিতে হিসাব চার প্রকার :

১) সম্পত্তিবাচক হিসাব : সম্পত্তি সম্পর্কিত হিসাব এ শ্রেণিতে লিপিবদ্ধ করা হয়।
২) দায় বাচক হিসাব : অন্য কারো নিকট দেনা বা দায় সম্পর্কিত হিসাব এ শ্রেণিতে লেখা হয়।
৩) আয় বাচক হিসাব : ব্যবসায়ের আয সম্পর্কিত হিসাব এ শ্রেণিতে লেখা হয়।
৪) ব্যয় বাচক হিসাব : ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের ব্যয় সম্পর্কিত হিসাব এ শ্রেণিতে লেখা হয়।